Header Ads

Header ADS

ইসলামের দাওয়াতের কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন রেবের ডিজি- বেনজীর আহমেদ

بسم الله الرحمن الرحيم

  • ইসলামের দাওয়াত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মহান আল্লাহ তাআলার  মানুষের উপরে দাওয়াত কে ফরজ করেছেন। যদিও মুসলিম স্কলারগণ একে ফরজে কেফায়া বলে দাবি করেন। কিন্তু কোরআনের আয়াত আমাদেরকে বলে প্রতিটা মানুষের জন্য আংশিক অর্থ হলো দাওয়াত ফরজ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের রেবের ডিজি বেনজির বলেন, ইসলাম এখন প্রচার করছে বড় ভাইরা। এই বড় ভাইদের ইসলামকে ধ্বংস করতে হবে। তাই এ সমস্ত বড় ভাইদের ইসলাম প্রচার করতে দেখলে আমাকে খবর দিবেন। আসলে বলতে হবে তিনি জানেন না, হয়তো না জেনে কথাগুলো বলছেন।




এখানে যে ভিডিওটা আমি দিয়েছি এটি আমার কাছে এক দ্বীনি ভাই পাঠিয়েছিলেন। ভিডিওটি অন্য কারো এডিট করা তবে মূল বক্তব্য সঠিক আছে কিনা আমি জানিনা।




আমি প্রথমে কিছু কথা বলে রাখি, আমি যে ভিডিওটা নিচে দিয়েছি অথবা যা আলোকে কথা বলতে চাচ্ছি, সে বক্তব্যটা ডিজি সাহেব কখন দিয়েছেন, তা আমি ঠিক জানি জানি না। তবে এ বিষয়ে আমার ধারণা এটা সম্ভবত হলিআটিজন এর সময় তিনি এ বক্তব্য দিয়েছেন। যদি কথাটা তিনি ওই সময় বলে থাকেন তবে আমি একা ভুল ব্যাখ্যা করব না। কারণ তিনি আসলে এটা বলতে চাননি, তিনি বলতে চেয়েছেন, জঙ্গীবাদকে রোধ করার জন্য যারা জঙ্গিবাদ পাচার করে তাদের কি আমাকে ধরিয়ে দিবেন। তবে তার বাচনভঙ্গি ভুল ছিল অথবা কথাটা ভুল ছিল এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ তিনি হয়তো জানেন না কোরআনের আসুন বিধি-বিধান সম্পর্কে। তিনি যদি সূরা আসর পাঠ করতেন, আমি বিশ্বাস করি তিনি কখনো এমন বক্তব্য দিতেন না। আমি বিশ্বাস করি তিনি জেনে শুনে এত বড় ভুল কথা বলবেন না। যতই বলি না কেন আমরা তার ভিতরে ঈমানের সামান্যটুকু আছে বলে বিশ্বাস করি। যার ভিতরে ঈমানের নূর টুকু থাকে তিনি কখনও সরাসরি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের খেলাফ করবেন না।


যাই হোক আজকে আমরা আলোচনা করব ইসলামের দাওয়াত সম্পর্কে অতি সংক্ষিপ্ত পরিসরে। কোরআন কারীমে মহান আল্লাহতালা বহুবার দাওয়াতের কথা বলেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস থেকে আমরা দাওয়াতের ব্যাপক নির্দেশনা পায়। 


ولتكل أمة ممكن يدعو ن إلى الخير تأمرون بالمعروف وينهون عن المنكر تؤمنون لا الله -

মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন, " তোমাদের মাঝে এমন একটি দল হওয়া উচিত, যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে আহবান করবে। সৎ কাজের আদেশ দিবে, মন্দ কাজের নিষেধ করবে, আর আল্লাহর উপর ঈমান রাখবে তথা বিশ্বাস রাখবে। [ আল কুরান] (রেফারেন্স পরে অ্যাড করা হবে। ইনশাআল্লাহ!)


অত এত খারাপ যাচ্ছে যে, মহান আল্লাহ তায়ালা পুরো মানব জাতির মধ্য থেকে একটা দলকে তার দিনের জন্য আহ্বান করতে বেরিয়ে বেরিয়ে পড়তে বলেছেন। তাদের বেরিয়ে করতে বলে শুধু ক্ষান্ত হয় নাই, বরং তাদেরকে তাদের কর্ম ফুদ্দি তুই কি হবে তাই স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। তাদের প্রথম যে কাজ হবে মানুষকে কল্যাণের দিকে আহবান করা। এখানে কল্যাণ বলতে বুঝানো হয়েছে ইসলামের দিকে আহবান করা। ইসলামকে কল্যাণ বলার কারণ হচ্ছে, ইসলাম মানুষকে দুনিয়ার জীবনে বা খারাপ এর জীবনী কল্যাণ দান করে থাকে। অর্থাৎ মানুষ যখন ইসলাম পালন করে, তখন সে ব্যক্তি জীবনে এবং পারিবারিক জীবনে শান্তি লাভ করে থাকে। আর তাই আল্লাহ তালা এখানে কল্যাণের দিকে আহবান করার কথা বলেছেন।


দ্বিতীয়তঃ যে কথা বলা হয়েছে, সৎ কাজের আদেশ দেওয়া এবং মন্দ কাজে নিষেধ করা। সৎ কাজের আদেশ বুদ্ধি শুধুমাত্র অন্যের কাজের কথা বুঝানো হয়নি। বরং অন্যের কাজের পাশাপাশি দুনিয়ার জীবনের শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যা কল্যাণকর তাকে এখানে শামিল করা হয়েছে। অর্থাৎ সৎকাজ বলতেসে সমস্ত কাজ যা আল্লাহ সুবহানাতায়ালা মানুষকে করার জন্য নির্দেশ দান করেছেন অথবা যা করার প্রতি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কোন নিষেধাজ্ঞা আসেনি। অর্থাৎ আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের খেলাপ হবে না।

আর মন্দ কাজ বলতে বুঝায়, সেই সমস্ত কাজ কে যা আল্লাহ তাআলা মন্ত্র রাসুল করতে নিষেধ করেছেন। এমন কাজ যা করলে মানুষের দুনিয়ার জীবন এবং আখেরাতের জীবন বিনষ্ট হবার সম্ভাবনা রাখে। হোক সেটা ব্যক্তির জন্য অথবা মানবতার জন্য। আর এইসব কাজে আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধ মানুষের উপর ফরয করা হয়েছে ট্যাগ কোরানের এই আয়াত থেকে স্পষ্ট ভাবে জানা যায়।

এরপর আপনার আল্লাহতালা বলছেন, তারা আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখবে অর্থাৎ ঈমান রাখবে। এর অর্থ হলো যে দলটি কল্যাণের কাজে বের হবে তারা মানুষকে দাওয়াত দিতে থাকবে তারে দাওয়াতের অর্থ এই নয় যে তাকে হেদায়েত দিয়ে দিবে বরং তাদের কাজ হলো তারা মানুষকে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দিবে। এবং এই বিশ্বাস করবে যে আল্লাহ তাদের অন্তরে হেদায়েত ঢেলে দিবেন। 

অন্যত্র আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ 

كنت خير أمة يخرجون إلى الخير تأمرون بال معروف و ينهون عن المنكر تؤمنون متون بالله 

অর্থাৎ তোমরা হল শ্রেষ্ঠ জাতি, তোমাদেরকে মানুষের কল্যাণের জন্য বের করা হয়েছে। আর তোমরা মানুষকে শতকরা যোগদান করবা, মন্দ কাজ হতে নিষেধ করলাম, আল্লাহর পরিমাণ রাখবা।

আয়াতের প্রথম অংশে আল্লাহ তা'আলা বলেন, তোমরা হল শ্রেষ্ঠ জাতি, তোমাদেরকে মানুষের কল্যাণে বের করা হয়েছে। এখানে সে সমস্ত লোকদের কে শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা মানুষের কল্যাণে দ্বীনের দাওয়াতের জন্যে বের করেছেন। যার ভিতর দিন নেই সে যতই ভালো কাজ করুক না কেন তার কোনো কাজে আসবে না। যেমন হাতেম তাই।

হাতিম তাই কে চিনে না পৃথিবীর এমন কোন লোক নেই, হাকিম তার চরিত্রের মাঝে আদি বিন হাকিম তাই এবং তারেক কন্যা ইসলাম গ্রহণ করেছিল, আদি বিন হাতিম তাই একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর কাছে এসে প্রশ্ন করেছেন হে আল্লাহর রাসূল, আমার পিঠা হাতিম তাই এমন কোন লোক নেই, সে তার থেকে কোন কোন উপকার লাভ করেনি, তাহলে আমার পিতার অবস্থা কি হবে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন, তোমার পিতা কি আল্লাহতালা যা দিবার তার দুনিয়াতে দিয়ে দিয়েছেন। আখেরাতে তার জন্য কিছুই নেই। একথা শুনে আদি বিন হাতিম তাই কান্না করতে করতে চলে যাচ্ছিল। নবী সাল্লাহু তাকে ডাকলেন পিছন থেকে লোক দিয়ে, তিনি আদি বিন হাতিম তা কি বললেন তোমার পিতা যেখানে, আমার পিতামাতা ও সেখানে।" এর অর্থ হলো আমি নবী হওয়া সত্ত্বেও আমার পিতা মাতাকে আমি রক্ষা করতে পারি নাই তুমি হাতেম তাই কি করে পারবে? কারন তারা উভয়েই শিরিক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছিল। ( হাদিসের মান এবং রেফারেন্স ভরাট করা হবে।)

এ হাদিস থেকে আমি বুঝতে পারি, তাবাহি ঠিক না থাকলে ,ইবাদত কাজে আসবে না। যেমনটি হাতিম তার মত এত বিশাল দানবীর হওয়া সত্ত্বেও তার দাম কোন কাজে আসলো না আখেরাতে। বাকি অংশটা পূর্বের আয়াতের ব্যাখ্যা।

এই দুইটা আয়াতের মাঝে আমরা দৃষ্টি করলে দেখতে পাই, এখানে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা একটা দলকে দাওয়াত এর জন্য বেরোতে বলেছেন। যেহেতু অতো আয়াতসমূহে একটা অংশ কে বের হতে বলেছেন আল্লাহতালা পুরা জাতিকে নয়। তাই এ থেকে বুঝা যাচ্ছে যে পুরা মানবজাতি কে দাওয়াতের কাজে বের হতে হবে না। দাওয়াতের জন্য একটা অংশ বের হলেই পুরা মানব জাতির পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে। তাই একে বলা হয় ফরজে কেফায়া।


আসুন আমরা এবার সূরাতুল আসর এর দিকে তাকায়। কুরআনুল কারীমের এক্কেবারে ছোট সূরা সমূহের মধ্যে সূরাতুল আসর অন্যতম একটি সূরা। আসুন আমরা সূরাটি পাঠ করি।

وَالْعَصْرِ ﴿١﴾  إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ ﴿٢﴾  إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ ﴿٣﴾


১। মহাকালের শপথ। [1]  ২। মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত। [2]  ৩। কিন্তু তারা নয়, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে[3] এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয়। [4] আর উপদেশ দেয় ধৈর্য ধারণের। [5]

[1] ‘মহাকাল’ বলতে দিবারাত্রির আবর্তন-বিবর্তনকে বুঝানো হয়েছে। রাত্রি উপনীত হলে অন্ধকার ছেয়ে যায়। আর দিন প্রকাশ পেতেই সমস্ত জিনিস উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। এ ছাড়া রাত কখনো লম্বা আর দিন ছোট, আবার দিন কখনো লম্বা আর রাত ছোট হয়ে থাকে। এই দিবারাত্রি অতিবাহিত হওয়ার নামই হল কাল, যুগ বা সময়; যা আল্লাহর কুদরত (শক্তি) ও কারিগরি ক্ষমতা প্রমাণ করে। আর এ জন্যই তিনি কালের কসম খেয়েছেন। পূর্বেই বলা হয়েছে যে, আল্লাহ পাক নিজ সৃষ্টির যে কোন বস্তুর কসম খেতে পারেন। কিন্তু মানুষের জন্য আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারোর নামে কসম খাওয়া বৈধ নয়।

(অনেকের মতে العَصر মানে আসরের সময় বা নামায। বলা বাহুল্য মহান সৃষ্টিকর্তা সেই জিনিসেরই কসম খেয়ে থাকেন, যার বড় গুরুত্ব আছে। -সম্পাদক)

[2] এটি হল কসমের জওয়াব। মানুষের ক্ষতি ও ধ্বংস সুস্পষ্ট। যেহেতু যতক্ষণ সে জীবিত থাকে ততক্ষণ তার দিনরাত মেহনত ও পরিশ্রমের সাথে অতিবাহিত হয়। অতঃপর সে যখন মৃত্যু বরণ করে তখনও তার আরাম ও শান্তি নসীব হয় না। বরং সে জাহান্নামের ইন্ধনে পরিণত হয়।

[3] তবে ক্ষতি হতে সেই ব্যক্তিরা নিরাপত্তা লাভ করবে, যারা ঈমান এনে নেক আমল করবে। কেননা, তার পার্থিব জীবন যেমনভাবেই অতিবাহিত হোক না কেন, মৃত্যুর পর সে চিরস্থায়ী নিয়ামত এবং জান্নাতের চিরসুখ লাভ করে ধন্য হবে। পরবর্তীতে মু’মিনদের আরো কিছু গুণ বর্ণনা করা হয়েছে।

[4] অর্থাৎ, তারা একে অপরকে আল্লাহ তাআলার শরীয়তের আনুগত্য করার এবং নিষিদ্ধ বস্তু এবং পাপাচার হতে দূরে থাকার উপদেশ দেয়।

[5] অর্থাৎ, মসীবত ও দুঃখ-কষ্টে ধৈর্য, শরীয়তের হুকুম-আহকাম ও ফরযসমূহ পালন করতে ধৈর্য, পাপাচার বর্জন করতে ধৈর্য, কামনা-বাসনা ও কুপ্রবৃত্তিকে দমন করতে ধৈর্য ধারণের উপদেশ দেয়। যদিও ধৈর্যধারণের উপদেশ সত্যের উপদেশেরই অন্তর্ভুক্ত, তবুও তা বিশেষ করে উল্লেখ করা হয়েছে। আর তাতে ধৈর্যধারণ ও তার উপদেশের মর্যাদা, মাহাত্ম্য এবং সুচরিত্রতায় তার পৃথক বৈশিষ্ট্য থাকার কথা সুস্পষ্ট হয়ে যায়।

এই সুরে আমরা দেখতে পাই মহান আল্লাহতালা মানুষের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত থেকে বেশি সে যারা তাদের চারটা বৈশিষ্ট্য কথা বলোনা বলেছেন। যারা এই চেকটা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হবে তারাই কেবল ক্ষতি থেকে বেঁচে যাবে। যাদের মাঝে এইটা একটা বৈশিষ্ট্য নেই অর্থাৎ যারা এই চারটা কাজ করবেনা, তারা মহা ধ্বংসের মাঝে আছে। আর এই জন্যই মহান আল্লাহ তায়ালা কসম করে বলেছেন। তার কসম খাওয়ার দৃশ্য হলো এই জেনে রাখ বান্দা আমার এই কথার কোন নড়চড় হবে না। তুমি নিশ্চিত থাকবে কাতার এর কোনো হেরফের হবে না। যারা এই কাজগুলো করবে তারাই কেবল মুক্তি পাবে। [ তাফসীরে আহসানুল বয়ান ]

আরে শর্তগুলোর মধ্যে প্রথমটা হল ঈমান। আর এই ঈমানের দাওয়াত দেওয়া প্রতিটি মুসলিমের জন্য ফরজ। 


আলোচিত আয়াত এবং সূরা আসর এর মধ্য থেকে আমরা জানতে পারি দুই রকম বর্ণনা। একরকম বর্ণনা হচ্ছে একটা দলকে দাওয়াতের কাজ করতেহবে। সমগ্র মানবজাতিকে নয়। মানবজাতির কিছু অংশ কে দাওয়াতের কাজ করলে পুরা মানব জাতির পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। আর দ্বিতীয়টি হল, আল্লাহপাক কসম করে বললেন, সমস্ত মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত। কেবলমাত্র সেইসব লোক ছাড়া যারা বর্ণিত চারটি কাজ করবে। 
1. আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।
2. নেক আমল করবে। হঠাৎ ঈমানকে কর্মের মাঝে বাস্তবায়ন করবে।
3. যে বিষয়ের প্রতি সেই ঈমান এনেছে তার প্রতি মানুষকে আহবান করবে।
4. মানুষকে দাওয়াত দিতে গিয়ে যদি কোন নির্যাতিত হয়, তবে সে ধৈর্য ধারণ করবে।
এই সত্যের কোন একটি যদি কারো নিকট থেকে পূর্ণ না হয় তবে সে মহা ধ্বংসের থেকে মুক্ত নয়। আর এই কথাটাই আল্লাহতালা কসম করে বুঝিয়েছেন। তিনি কেন কসম করেছেন ? নিশ্চিত করার জন্য। যাতে এই বিষয়ে বান্দা কোন প্রকার সংশয় পোষণ না করে।

এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি, প্রতিটা মানুষের জন্য দাওয়াতের কাজ বাধ্যতামূলক। তাহলে এই দুই রকম কথার সমস্যার সৃষ্টি করাটাই স্বাভাবিক। এর সমাধান কি? আসলে a2 এর আলোচনার মাঝে সমাধান হল প্রতিটা মুসলিমের জন্য তাওহীদের দাওয়াত ফরজ। অর্থাৎ দাওয়াত ততক্ষণ পর্যন্ত প্রতিটি মুসলমানের জন্য ফরজ হয়ে যাবে, যতক্ষণ না তার সমাজে তাওহীদ পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে শিরিক পরিপূর্ণরূপে উৎখাত না হবে। আল্লাহর জমিনে এক আল্লাহর এবাদত প্রতিষ্ঠিত না হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত প্রতিটি মুসলিমের জন্য দাওয়াত ফরজ।

তাওহীদ প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে মুসলিম সমাজের ইসলাহ করার জন্য বা সংশোধন করার জন্য যে দাওয়াত প্রতিষ্ঠিত হয় তা হল ফরজে কিফায়া। অর্থাৎ কয়েকজন লোক কাজ করলে জয়াপুরা সমাজের পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। আর এটাই হল সৎ কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজের নিষেধ। এখন সেই দিন রেবের ডিজি সাহেব যে কথাটি বলেছেন," এখন ইসলাম প্রচার করে বড় ভাইয়েরা। এই বড় ভাইদের ইসলাম এখন আমাদের ধ্বংস করতে হবে।" আসলেই তিনি চরম ভুল বলেছেন। কেন বলেছেন? কারণ তিনি জানতেন না। এটাকে বলা হয়, না জানার কারনে ভুল।

যদি তারে কথাটা বাস্তবায়ন করতে যাই, তাহলে ফরজ এবং ফরজে কেফায়া দুটোর কোনটাই আদায় করা সম্ভব নয়। কারণ বাংলাদেশে এখনও তাওহীদ পরিপূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আমি বলছি তা ব্যক্তির মাঝে। এখনো এই দেশের অধিকাংশ মানুষ আল্লাহর ইবাদতের নামে শিরিক করে যাচ্ছে । মানুষ পীরের কাছে চাই, লেংটা বাবার কাছে চাই, জিবি তোর কাছে চাই, মৃতের কাছে চাই। যার প্রতিটি কাজের শিরিক। আর শিরক মিশ্রিত এবাদত আল্লাহ কখনো গ্রহণ করেন না।

" হাদিসে কুদসি কি আল্লাহ তা'আলা বলেন, যখন মানুষ কোন একটা আমল করল, আর তাতে শিরিক মিশ্রিত করল, আমি তাকে বর্জন করি ও তার শিরিকেও বর্জন করি।" ( বোখারী)

এখানে দেখা যাচ্ছে, আল্লাহ বললেন, আমি তাকে বর্জন করি, তার শিরিক কে ও বর্জন করি। তিনি বললেন না ,আমি তাকে বর্জন করি, এবং তার আমল কে বর্জন করি। বরং তিনি বললেন আমি তাকে বর্জন করি এবং তার শিরিক কে ও বর্জন করি।

তাহলে আমরা বুঝতে পারছি যে, ইবাদত ও যখন শিরিক মিশ্রিত হয়, তখন তা আর ইবাদত বা আমল থাকেনা বরং তা শির্কে পরিণত হয়।

" তাইতো আল্লাহ্ তা'আলা আরও বলেন হাদিসে কুদসীতে, আমি পবিত্র, তাই আমি পবিত্রতা ছাড়া কোন কিছুকে গ্রহণ করি না।"


আর এই কথাটাই সূরা কাফিরুন আল্লাহতালা বলছেন এভাবে,


وَلَا أَنْتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ -



[তাফসীরে জাকারিয়া]
৩. এবং তোমরাও তার ইবাদতকারী নও যার ইবাদত আমি করি(১),


(১) এ সুরায় কয়েকটি বাক্য পুনঃপুনঃ উল্লিখিত হওয়ায় স্বভাবত প্রশ্ন দেখা দিতে পারে। এ ধরনের আপত্তি দূর করার জন্যে বুখারী অনেক তাফসীরবিদ থেকে বর্ণনা করেছেন। যে, একই বাক্য একবার বর্তমানকালের জন্যে এবং একবার ভবিষ্যৎকালের জন্যে উল্লেখ করা হয়েছে। [ফাতহুল বারী] অর্থাৎ আমি এক্ষণে কার্যত তোমাদের উপাস্যদের ইবাদত করি না এবং তোমরা আমার উপাস্যের ইবাদত কর না এবং ভবিষ্যতেও এরূপ হতে পারে না। ইমাম তাবারীও এ মতটি বর্ণনা করেছেন। ইবনে কাসীর এখানে অন্য একটি তাফসীর অবলম্বন করেছেন। তিনি প্রথম জায়গায় আয়াতের অর্থ করেছেন এই যে, তোমরা যেসব উপাস্যের ইবাদত কর, আমি তাদের ইবাদত করি না এবং আমি যে উপাস্যের ইবাদত করি তোমরা তার ইবাদত করা না। আর দ্বিতীয় জায়গায় আয়াতের অর্থ করেছেন এই যে, আমার ও তোমাদের ইবাদতের পদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন। আমি তোমাদের মত ইবাদত করতে পারি না এবং বিশ্বাস স্থাপন না করা পর্যন্ত তোমরাও আমার মত ইবাদত করতে পার না। এভাবে প্রথম জায়গায় উপাস্যদের বিভিন্নতা এবং দ্বিতীয় জায়গায় ইবাদত পদ্ধতির বিভিন্নতা বিধৃত হয়েছে। [ইবন কাসীর]

সারকথা এই যে, তোমাদের মধ্যে ও আমার মধ্যে উপাস্যের ক্ষেত্রেও অভিন্নতা নেই এবং ইবাদত-পদ্ধতির ক্ষেত্রেও নেই। এভাবে পুনঃপুনঃ উল্লেখের আপত্তি দূর হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মুসলিমদের ইবাদতপদ্ধতি তাই; যা আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে ওহীর মাধ্যমে বলে দেয়া হয়েছে। আর মুশরিকদের ইবাদত পদ্ধতি স্বাকল্পিত। ইবনে-কাসীর এই তাফসীরের পক্ষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ কলেমার অর্থ তাই হয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোন হক্ক উপাস্য নেই। ইবাদত-পদ্ধতি তা-ই গ্রহণযোগ্য, যা মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাধ্যমে আমাদের কাছে পৌছেছে। কোন কোন অভিজ্ঞ আলেম বলেন, ২ নং আয়াতের অর্থ, আমি তোমাদের উপাস্যদের ইবাদত কখনো করবো না। পক্ষান্তরে দ্বিতীয় আয়াতের অর্থ, আমি এ ইবাদতটা কখনো, কিছুতেই গ্রহণ করবো না। অর্থাৎ তোমাদের উপাস্যদের ইবাদত করা আমার দ্বারা কখনো ঘটবে না। অনুরূপভাবে তা শরীয়তেও এটা হওয়া সম্ভব নয়। [মাজমূ’ ফাতাওয়া শাইখিল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ, ১৬/৫৪৭-৫৬৭; ইবন কাসীর]

এর আরেকটি তাফসীরও হতে পারে। আর তা হলো, প্রথমত ২নং আয়াত (لَا أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ) অর্থ “আমি বর্তমানে এবং ভবিষ্যতে তার ইবাদত করি না, তোমরা যার ইবাদত কর’। এর পরে এসেছে, (وَلَا أَنْتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ) অর্থাৎ তোমরাও বর্তমানে ও ভূবিষ্যতে ইবাদতকারী নও। আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে চতুর্থ আয়াতে বলা হয়েছে, (وَلَا أَنَا عَابِدٌ مَا عَبَدْتُمْ) অর্থাৎ অতীতে আমার পক্ষ থেকে এরূপ কিছু ঘটেনি। অতীত বোঝানোর জন্য عَبَدْتُمْ অতীতকালীন ক্রিয়া ব্যবহৃত হয়েছে। আর এর পরে এসেছে, (وَلَا أَنْتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ) অর্থাৎ তোমরাও অতীতে তার ইবাদত করতে না, যার ইবাদত আমি সবসময় করি। ইবনুল কায়্যিম এ মতটি গ্ৰহণ করেছেন। [বাদায়ি’উল ফাওয়ায়িদ, ১/১২৩–১৫২]


আমরা এখানে দেখতে পাচ্ছি আল্লাহ বলছেন কাফেরদের কে, তারা বলে আমরা এবাদতকারী। আর হে নবী আপনি বলে দিন তোমরা এবাদতকারী নও।

তাই আমরা বলতে পারি বাংলাদেশের পেক্ষাপটে অধিকাংশ মানুষ আল্লাহর এবাদত করি নয়। তাই তাদেরকে তাওহীদের দিকে দাওয়াত দিতে হবে যেটুকু একজন তাওহীদ বাদী আয়ত্ত্ব করতে পেরেছে। এটা মহান আল্লাহ তাআলার নির্দেশ। অবশ্যই দাওয়াত ফ্রি দাওয়াত হতে পারবেনা। জিহাদের দিকে হবে না। হবে কেবল এক আল্লাহর তাওহীদ শিক্ষার ব্যাপারে। এটা হল ফরজ দাওয়াত।

আর যে ফরজে কেফায়া দাওয়াত তা হল ভালো কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজের নিষেধ এর দাওয়াত।

এখন আপনারাই বলুন বাংলাদেশের দাওয়াতের অবস্থান কোনটি বিবেচনায় আসবে। এখানে দাওয়াত কি ফরজ? নাকি ফরজে কিফায়া?

ফরজ হলেও স্কুল-কলেজ ইউনিভার্সিটি দাওয়াতের কাজ করতে হবে দুইটা বিষয় সামনে রেখে। এক নাম্বার তাওহীদের দিকে আহবান। দুই নাম্বার হলো সৎ কাজের উপদেশ এবং মন্দ কাজের নিষেধ। আমি এইতো বলতে চাই বেনজির সাহেবের বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে ভুল। কারণ তিনি জানতেন না। আমি মনে করি তিনি এই বিষয়টার প্রতি খেয়াল রেখে তার আগামী কর্ম গুলিকে সম্পাদন করবেন। তবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যেমন পূর্বে সোচ্চার ছিলেন এখনো থাকবেন। কারণ ইসলাম আইএস, তালেবান, অথবা অন্য যেকোনো জঙ্গিগোষ্ঠীকে কোনভাবেই সমর্থন করে না। ইসলামের জিহাদের রূপরেখা আর তথাকথিত এইসব জিহাদিদের জিহাদের রূপরেখা আকাশ আর মাটি যেমন পার্থক্য এ দুয়ের মাঝে তেমনি পার্থক্য বিদ্যমান।

পরিশেষে আমি সেইসব ভাইয়ের প্রতি অনুরোধ করবো যারা মানুষকে তাওহীদের দিকে আহবান করেন, এবং সৎ কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজের নিষেধ করেন। তাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালার এই পথনির্দেশিকা বাস্তবায়ন করবেন। আমি আশা করি আল্লাহ আমাদেরকে সূরা আছর এর উপর পরিপূর্ণ আমল করার তৌফিক দান করবেন। এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই তিনি যেন আমাদেরকে এই সুরের উপর আমল করার তৌফিক দান করেন। এবং আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ইসলামের দায়ীদের বিরুদ্ধে যেন পরিচালনা করেন। বরং দায়ীদের যেন সাহায্যকারী হিসেবে তাদের অন্তরকে পরিবর্তন করে দেন।
আল্লাহুম্মা আমীন।


"সুবহানাকা আল্লাহুম্মা বিহামদিকা আস্তাগফিরুকা ওয়াতুবু ইলাইহি...........।"

No comments

Theme images by Deejpilot. Powered by Blogger.