হোসেন কোরআনীর মুখোশ উম্মোচন। পর্ব 1। অতি সাম্প্রতিক একজন ধর্ম প্রচারকারী, যিনি নিজেকে সবচাইতে বেশি জানেন বলে দাবি করেন। তিনি দাবি করেছেন যে তিনি একশত পঞ্চাশ বছর বাঁচবেন তার এই দাবি কতটুকু শরীয়ত সম্মত?
আস্সলামুয়ালাইকুম ওরাহমাতুল্লাহ!
আজকে আমরা আলোচনা করবো একজন দাঈর শরীয়া বিরোধী দাবীর জবাব। যিনি বিভিন্ন হোয়াটআপ গ্রুপে প্রশ্নের জবাব দিয়ে থাকেন। তিনি দাবী করেন তিনি নাকি 150 বছর বাঁচবেন। এর কারণ হিসেবে তিনি কিছু যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। যা ইসলামী শরীয়া সমর্থন করেনা। তিনি যে দাবী করেছেন, মুসলিমদের ঈমান ও আক্কীদার পরিপন্থী। এমন কি তিনি নিজেকে আলেমুল গায়েব জানার দাবী করেছেন। যা তাকে বান্দার স্তর হতে আল্লাহ্ স্তরে পৌছে দেয়। আমরা আজ তার শরীয়া বিরোধী দাবীর কুরান সুন্নাহ দ্বারা খন্ডন করব, ইংশা-আল্লাহ্!
তার দাবী সমূহঃ
তিনি বলেন, তিনি শারীরিক কন্ডিশনের নির্ভর করে 150 বছর বাঁচার দাবি করেছেন। তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেনঃ
👉👉👉শারিকক কন্ডিশনের উপর অনুমান করে বলছি, আমি 150 বছর বাঁচব। কারণ তিনি দীর্ঘ হায়াত জন্য লাভের জন্য তিনি
👇👇👇
1, কঠিন ডাইড চার্ট মেনে চলি।
2, রুটিন এক্সারসাইজ করি।
3, হাতুড়ির মাইর বাচ্চা ছেলের মাইর মনে হওয়া।
4, এইরকম সুস্থ সরীল 35-40 বছরে এসে ব্লাড প্রেশার, সুগার, হার্ট এটাকে মারা যাবে না কি?
জবাবঃ
01: মানুষ কি শারীরিক কন্ডিশনের উপর নির্ভর করে বাঁচে?
উত্তর হলো না মানুষ কখনো তার শারীরিক কন্ডিশন উপর নির্ভর করে বাঁচতে পারে না। কারণ যদি মানুষ সাবেক কন্ডিশন উপর বেঁচে থাকতে পারতো তাহলে অবশ্যই দুর্বলেরা খুব দ্রুত মারা যেত আর শক্তিশালী রা দীর্ঘ হায়াত লাভ করতো। কিন্তু আমরা বাস্তবে দেখি তার বিপরীত। বাস্তবে যখন আমাদের চারদিকে তাকায়, তখন আমরা দেখতে পাই, অনেক সুস্থ সবল এবং উন্নত অবকাঠামোর মানুষকে হঠাৎ করে মৃত্যুবরণ করছে। অন্যদিকে একজন দুর্বল ও অসুস্থ মানুষকে দেখি বছরের পর বছর খানাপিনা ছাড়াও বিছানায় পড়ে থেকেও দীর্ঘ হায়াত লাভ করতে। তার মানে হল মানুষ তার শারীরিক কন্ডিশন এর উপর নির্ভর করে বাঁচেনা বরং মানুষ একটা নির্দিষ্ট সময় পার করার জন্য বেঁচে থাকে।
উপরোক্ত সামান্য পরিসরে আলোচনা থেকে আমরা এটুকু বুঝতে পারি যে, দেহ এবং প্রাণ দুটি পৃথক বস্তু। দেহকে সচল রাখার জন্য প্রাণের অত্যাবশ্যক হয়, আবার প্রাণকে প্রকাশ করার জন্য দেহের প্রয়োজন হয়। দেহ থেকে প্রাণ যখন আলাদা হয়, তখন আমরা প্রানের অস্তিত্বকে উপলব্ধি করতে পারিনা। তাই প্রাণের বহি প্রকাশের জন্য দেহ অত্যাবশ্যক। তার মানে এই নয় যে দাহ না থাকলে তান থাকতে পারে না বরং দেহ থেকে প্রাণ আলাদা হয়ে থাকাটা সম্ভাব্য বেশি। যেহেতু আমরা প্রাণের বিনাশ দেখিনা। অন্যদিকে আমরা দেহের বিনাশ দেখতে পাই।
02: প্রাণ, আত্মা বা রুহ কি?
প্রাণ বা আত্মা হল, বাতাস বা এমন এক শক্তি, যা যে কোন প্রাণীর শরীরে থাকলে তা সজাগ থাকে।
প্রাণ বা আত্মা হল এক প্রকার এনার্জি বা শক্তিই, যা কোন শরীরে সঞ্চারিত হলে শরীর জেগে উঠে।"
অর্থাত রুহ থাকে আমরা বেঁচে থাকি, আর রুহ না থাকলে আমরা মৃত্যুবরণ করি।
এখানে অনেকেই প্রাণের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে থাকেন। তাদের যুক্তি হলো আমরা যা দেখি না তা কেন বিশ্বাস করব? কিন্তু বাস্তবিক সত্য হল যে, আমরা না দেখে অনেক কিছু কে বিশ্বাস করি। যেমনঃ
- 01, আমাদের জন্মদাতা পিতাকে জন্ম দিতে আমরা দেখিনি, কিন্তু আমাদের মা অথবা আমাদের পরিবার যখন আমাদেরকে বলে দেয়, তিনি তোমার জন্মদাতা পিতা। তখন আমরা তাকে গ্রহণ করে থাকি পিতা বলে। অথচ না দেখেই পিতাকে পিতা বলে বিশ্বাস করে আসছিলাম।
- 02, দ্বিতীয়তঃ থাকলেও আমাদের শরীরে যখন জ্বর হয় অথবা তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় তখন আমরা কেবল অনুভব করে বলি, আমাদের শরীরে জ্বর বা তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। যদি জ্বর এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও উপলব্ধির মাধ্যমে বিশ্বাস করা যায়। তাহলে কেন দেহের মাঝে প্রাণকে উপলব্ধির মাঝে বিশ্বাস করা যাবেনা? তাই প্রাণের অস্তিত্ব অবশ্যম্ভাবীভাবে অস্বীকার করা যায় না।
- 03, তৃতীয়তঃ আমরা আমাদের আকল, জ্ঞান কে দেখিনি। অথচ উপলব্ধির করি বিধান বিশ্বাস করি।
- 04, চতুর্থঃ আবেগ অনুভূতিকে আমরা দেখিনা অথচ আমরা বিশ্বাস করি।
এইভাবে বহুবিধ রয়েছে, যা আমরা দেখিনা কিন্ত বিশ্বাস করি। যখন আমরা অনেক কিছুই না দেখে বিশ্বাস করি, আল্লাহ কে ও প্রাণকে না দেখে অনুভবের মাঝে বিশ্বাস করতে বাধা কোথায়?
03: আল-কোরআনে প্রাণ রূহ বা আত্মা সম্পর্কে যা বলা হয়েছেঃ
রুহ হল মহান আল্লাহ্ প্রদত্ত এক বিশেষ দান। মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন প্রতিটি প্রাণীর মাঝে সঞ্চারিত করেছেন। প্রতিটি প্রাণিকে প্রথমে সৃষ্টি করেন, অতঃপর তার ভিতরে প্রাণকে সঞ্চারিত করেন বা ফুকেদেন। যাকে আমরা মহান প্রভুর নির্দেশ হিসাবে জানি। এই ফুকে দেওয়া রুহ, ততক্ষণ যেকোন প্রাণীর শরীর বহন করতে পারে, যতক্ষণ রবের আদেশ থাকে। যেমন টি মহান আল্লাহ আমাদের জানিয়েছেন। মহান আল্লাহ ঈশা আঃ সম্পর্কে বলেনঃ
وَٱلَّتِىٓ أَحْصَنَتْ فَرْجَهَا فَنَفَخْنَا فِيهَا مِن رُّوحِنَا وَجَعَلْنَٰهَا وَٱبْنَهَآ ءَايَةً لِّلْعَٰلَمِينَ
আর স্মরণ কর সেই নারীকে যে নিজ সতীত্বকে রক্ষা করেছিল এবং আমি তার মধ্যে আত্মা ফুঁকে দিয়েছি, এবং তাকে ও তার পুত্রকে করেছিলাম বিশ্ববাসীর জন্য এক নিদর্শন। ( সূরা আম্বিয়া-91 বা Al-Anbiya 21:91 )
এখানে বলা হয়েছে, মরিয়াম আঃ তাঁর সস্তীত্বকে রক্ষা করে ছিল। তার মানে তিনি পবিত্র নারী ছিলেন। আর মারয়াম আঃ এর ভিতরে তথা গর্ভাশয়ে ঈশা আঃ এর রুহ কে ফুকে দেওয়া হয়েছিল। তার মানে রূহকে ফুকে দেওয়া হয়।
একই কথা সূরা তাহরীমের 12 নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছেঃ
وَمَرْيَمَ ٱبْنَتَ عِمْرَٰنَ ٱلَّتِىٓ أَحْصَنَتْ فَرْجَهَا فَنَفَخْنَا فِيهِ مِن رُّوحِنَا وَصَدَّقَتْ بِكَلِمَٰتِ رَبِّهَا وَكُتُبِهِۦ وَكَانَتْ مِنَ ٱلْقَٰنِتِينَ
আরও দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন ইমরান তনয়া মারইয়ামের, যে তার সতীত্ব রক্ষা করেছিল, ফলে আমি তার মধ্যে রূহ ফুঁকে দিয়েছিলাম এবং সে তার রবের বাণী ও তাঁর কিতাবসমূহ সত্য বলে গ্রহণ করেছিল; সে ছিল অনুগতদের একজন। ( সূরা আত তাহরীম 12 বা, 66:12)
এই খানে বলা হয়েছে, "সে তার সতীত্ব রক্ষা করেছিল, ফলে আমি তার মধ্যে রূহকে ফুকে দিয়েছিলাম।"
সুতরাং অত্র আয়াত থেকে আমরা আরো একটি বিষয় জানতে পারি যে, কোন অসতি নারীর গর্ভে সৎ সন্তান-সন্তুতি হয়না, হতে পারেনা। যদিও এখানে শুধু নরীর কথা বলা হয়েছে, তবুও এর মাঝে নারী-পুরুষ উভয়ে সামিল থাকবে। তাই নেককার সন্তান-সন্ততি পেতে হলে পিতা-মাতা উভয়কে সচ্চরিত্রে অধিকারী হতে হবে।
يَٰٓأَهْلَ ٱلْكِتَٰبِ لَا تَغْلُوا۟ فِى دِينِكُمْ وَلَا تَقُولُوا۟ عَلَى ٱللَّهِ إِلَّا ٱلْحَقَّۚ إِنَّمَا ٱلْمَسِيحُ عِيسَى ٱبْنُ مَرْيَمَ رَسُولُ ٱللَّهِ وَكَلِمَتُهُۥٓ أَلْقَىٰهَآ إِلَىٰ مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِّنْهُۖ فَـَٔامِنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرُسُلِهِۦۖ وَلَا تَقُولُوا۟ ثَلَٰثَةٌۚ ٱنتَهُوا۟ خَيْرًا لَّكُمْۚ إِنَّمَا ٱللَّهُ إِلَٰهٌ وَٰحِدٌۖ سُبْحَٰنَهُۥٓ أَن يَكُونَ لَهُۥ وَلَدٌۘ لَّهُۥ مَا فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِى ٱلْأَرْضِۗ وَكَفَىٰ بِٱللَّهِ وَكِيلًا
হে আহলে কিতাব! তোমরা স্বীয় ধর্মে সীমা অতিক্রম করনা এবং আল্লাহর বিরুদ্ধে সত্য ব্যতীত বলনা; নিশ্চয়ই মারইয়াম নন্দন ঈসা মাসীহ্ আল্লাহর রাসূল ও তাঁর বাণী - যা তিনি মারইয়ামের প্রতি সঞ্চারিত করেছিলেন এবং তাঁর আদিষ্ট আত্মা; অতএব আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর বিশ্বাস স্থাপন কর। আর ‘‘আল্লাহ তিন জনের একজন’’- এ কথা বলা পরিহার কর। তোমাদের কল্যাণ হবে; নিশ্চয়ই আল্লাহই একমাত্র ইলাহ; তিনি কোন সন্তান হওয়া হতে পুতঃ, মুক্ত। নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে যা আছে তা তাঁরই এবং আল্লাহই কার্য সম্পাদনে যথেষ্ট। (সূরা নিসা-171 বা 4:171)
এইখানে মহান আল্লাহ বলেনঃ" নিশ্চয়ই মারইয়াম নন্দন ঈসা মাসীহ্ আল্লাহর রাসূল ও তাঁর বাণী - যা তিনি মারইয়ামের প্রতি সঞ্চারিত করেছিলেন এবং তাঁর আদিষ্ট আত্মা।"
এখানেই তাওহীদের দিকে ইঙ্গিত করে হলেন, ঈশা আঃ আল্লাহর রাসূল ছাড়া আর কিছুই নন। কারণ ইয়াহূদী রা তাঁকে ইবনুল্লাহ বলতো। আল্লাহ সুমহান ইয়াহূদীদের ভ্রান্ত দাবীর জবাব দেন এবং স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন যে, ঈশা আঃ
কেবল আল্লাহর রাসূল ও বাণী, যা তিনি মারইয়াম আঃ এর প্রতি সঞ্চারিত করেছিলেন। এই খানে সর্বশেষ বলেন যা মারইয়ামের প্রতি সঞ্চারিত করেছিলেন। তার মানে যা দেহ থেকে আলাদা, দেহ সৃষ্টির পর তা বা প্রাণ বা রূহকে মাতৃগর্ভে সঞ্চারিত করা হয়।
فَإِذَا سَوَّيْتُهُۥ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِن رُّوحِى فَقَعُوا۟ لَهُۥ سَٰجِدِينَ
যখন আমি তাকে সুঠাম করব এবং তাতে আমার রূহ সঞ্চার করব তখন তোমরা তার প্রতি সাজদাহবনত হও। ( সূরা আল হিজর-15:29 )
এইখানে মহান আল্লাহ আদম আঃ কে সৃষ্টি করে রূহ সঞ্চারিত করার পর ফেরেশতাদের আদম আঃ কে সেজদার কথা বলেছেন।
ثُمَّ سَوَّىٰهُ وَنَفَخَ فِيهِ مِن رُّوحِهِۦۖ وَجَعَلَ لَكُمُ ٱلسَّمْعَ وَٱلْأَبْصَٰرَ وَٱلْأَفْـِٔدَةَۚ قَلِيلًا مَّا تَشْكُرُونَ
পরে তিনি ওকে করেছেন সুষম এবং ওতে ফুঁকে দিয়েছেন রুহ্ তাঁর নিকট হতে এবং তোমাদেরকে দিয়েছেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণ; তোমরা অতি সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাক। ( সূরা আস সাজদা-32:9 )
এই খানে ও রূহ কে আলাদা ফুঁকে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
وَيَسْـَٔلُونَكَ عَنِ ٱلرُّوحِۖ قُلِ ٱلرُّوحُ مِنْ أَمْرِ رَبِّى وَمَآ أُوتِيتُم مِّنَ ٱلْعِلْمِ إِلَّا قَلِيلًا
তোমাকে তারা রূহ্ সম্পর্কে প্রশ্ন করে, তুমি বলঃ রূহ্ আমার রবের আদেশ ঘটিত; এ বিষয়ে তোমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই দেয়া হয়েছে। ( আল-ইসরা-17:85 )
"এই আয়াতে আমরা যা জানতে পারি তা হল রূহ হল মহান প্রভুর নির্দেশ মাত্র।"
উক্ত সবকটি আয়াত আমরা জানতে পারি যে, রূহ এবং দেহ আলাদা জিনিস, যা দেহ সৃষ্টির পর ফূকে দেওয়া হয়, অতঃপর রবের আদেশক্রমে তা সঞ্চারিত হতে থাকে। যতদিন মহান প্রভুর নির্দেশ বহাল থাকবে ততদিন তা আমাদের শরীরের সঞ্চারিত হতে থাকবে।
আজকে আলোচনাটা এখানে শেষ করছি। ইনশাল্লাহ বাকি আলোচনা পাবলিস্ট করা হলেই লিংক করে দেওয়া হবে।
ইউটিউব থেকে দেখতে চাইলে, নিচের লিংকে ভিজিট করুন! এবং আমাদের পাশে থাকুন!
No comments